• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

বৃত্তাকার নৌপথ ষোল আনাই চ্যালেঞ্জ

  • তরিকুল ইসলাম সুমন
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০২৪

যানজট কমাতে রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার পথ তৈরির জন্য ২০০০ সালে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, রাজধানীতে প্রবেশ না করে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত। কিন্তু উদ্যোগটি ২৪ বছর ধরে হোঁচট খাচ্ছে। নানা অব্যবস্থাপনা ও প্রতিকূল পরিবেশ না থাকায় তা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃত্তাকার পথ নির্মাণ ষোল আনাই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে হাল ছাড়ছে না সরকার। বৃত্তাকার নৌপথ দ্রুতই চালু হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
২০০০ সালে প্রথম বৃত্তাকার নৌপথের প্রস্তাব আসে। সেই অনুযায়ী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এরপর বৃত্তাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ নিয়ে ২০০৫ সালে নেওয়া হয় পরিকল্পনা। এরই ধারাবাহিকতায় এই নৌপথে ২০০৪-২০১০, ২০১৩-২০১৪ সর্বশেষ ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাঁচ দফা ওয়াটার বাস ও স্পিডবোট চালু করা হলেও কিছু দিনের মধ্যে এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ব্যবহার উপযোগী করে বৃত্তাকার নৌপথ (সার্কুলার ওয়াটার ওয়ে) চালু করা হবে। পথটি চালু করার ব্যাপারে একটি সমীক্ষা চলছে। বৃত্তাকার নৌপথ চালুতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা আমরা শেষ করে এনেছি। নদীগুলোর দূষণ ও দখল রোধে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করা হবে। এ বিষয়ে আমরা এলজিইডিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। বৈঠকে আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার জন্য নৌপথের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। যাতে করে তারা তাদের নিচু ব্রিজগুলো উঁচু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃত্তাকার নৌপথের প্রয়োজনীয় সমীক্ষা না করা, সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, মামলা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা, নৌপথের দূষিত পানি, নদীর অগভীর অংশের ড্রেজিং না করা, সীমানা পিলার নিয়ে জটিলতা, নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা এবং নিচু সেতুর কারণে এ রুট চালু করা সম্ভব নয়। সদরঘাট থেকে টঙ্গী রুটে ওয়াটারবাস কয়েক দফা চালু করে বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ২০২২ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া স্পিডবোট সার্ভিসও এখন বন্ধ। খেয়াপারের মতো ওয়াটারবাস চলে। বর্তমানে এ নৌ-রুটে ট্রলার, কিছু কার্গো চলতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক এই নৌপথ চালুর উদ্যোগ ভালো হলেও। শুরুতেই সমীক্ষা না করেই প্রায় ২৫ কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ল্যান্ডিং স্টেশন এবং নদী থেকে স্কেভেটর দিয়ে ময়লা উত্তোলনেই ছিল প্রকল্পর সীমাবদ্ধতা। এটি পুরোদমে চালু করতে চাইলে যাত্রী চাহিদা সমীক্ষা করে দেখতে হবে। এখন বৃত্তাকার নৌপথ কতটা সুলভ বা প্রয়োজন তা দেখতে হবে কারণ হিসেবে তিনি মেট্রোরেলের কথা বলেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল অনায়াসে যেতে পারেন। নৌপথে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে চান না যাত্রীরা।

জানা গেছে, শহরকেন্দ্রিক বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও বালু এই পাঁচটি নদীর সঙ্গে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দরকে যুক্ত করতে চায় সরকার। এ জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ নদী ও তিন নদীবন্দরকে এক নৌপথে এখনো আনা যায়নি। ঢাকার পাশের এই পাঁচ নদীর মিলিত দৈর্ঘ্য ১১০ কিলোমিটার। এ অবস্থায় ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদীগুলোয় নৌযান চলাচলের উপযোগিতা কমছে। ওয়াটার বাস ও স্পিডবোটের প্রপেলারের সঙ্গে নদীতে থাকা বর্জ্য আটকে যায়, থেমে যায় নৌযান। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি কোনোভাবেই যাত্রী পরিবহন ধরে রাখা যাচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, নাব্য বাড়াতে নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিতকরণ রয়েছে এক নম্বরে। বলা হয়েছে, ঢাকার চার পাশের ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার নৌপথে ১২ ফুট গভীরতা রয়েছে। অবশিষ্ট ৪৭ কিলোমিটারে ৮ ফুট গভীরতা। এর মধ্যে সিন্নিরটেক থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার নৌপথ ১২ ফুট গভীর করার কাজ চলমান। তবে এ জন্য দুই বছর লাগবে। অবশিষ্ট ৩৭ কিলোমিটারও গভীর করতে হবে ক্রমান্বয়ে। বৃত্তাকার পথের আরেকটি বাধা নদীর বর্জ্য। এ জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আছে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিতকরণ। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি বিআইডব্লিউটিএর। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ দখলমুক্ত। ৭ হাজার ৫৬২টি পিলারের মধ্যে ৫ হাজার ৭৫টি স্থাপন করা হয়েছে। নদীগুলোয় ৯টি ল্যান্ডিং স্টেশন, ৩টি ইকোপার্ক, ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে করা হয়েছে। জেটি নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি। নদীর নাব্য সংকট রয়েছে ১০ জায়গায়। এগুলো হলো তামান্না পার্ক, নবাবের বাগ, বিরুলিয়া ব্রিজ এলাকা, প্রত্যাশা হাউজিং এলাকা, ইজতেমা মাঠ এলাকা, হারবাইদ এলাকা, ত্রিমুখ-হর্দা এলাকা, ইছাপুর এলাকা, কায়েতপাড়া এবং ডেমরা এলাকায় নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বালু নদীর ২১ কিলোমিটার ও টঙ্গী খালের ১৫ কিলোমিটার এলাকায় গবেষণা কাজ চলমান।

‘ঢাকা শহরের চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে তীর রক্ষা, হাঁটার পথ তৈরি ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক যে প্রকল্প হাতে নেয় সরকার, সেটিই বৃত্তাকার নৌপথ নামে পরিচিত। বৃত্তাকার নৌপথ ঘিরে সরকারের বহু বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছে। এর মধ্যে বড় অসুবিধা সেতুর উচ্চতা বাড়ানো। টঙ্গী নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত ধউর সেতু থেকে ত্রিমুখ সেতু পর্যন্ত মোট ১৩টি নিচু সেতু রয়েছে। ফলে উঁচু নৌযান এই ৩৮ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে পারে না। তাই এই ১৩টি সেতু ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে আশুলিয়া সেতু, ধউর সেতু, টঙ্গী সেতু, ত্রিমুখ সেতু, বালু সেতু, ইছাপুর সেতু ও টঙ্গী রেল সেতু অন্যতম। তবে সেতু ভেঙে তা পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন করা শুরু হয়নি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীর পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ঢাকায় ইনার ও আউটার সার্কুলার দুই ধরনের বৃত্তাকার সড়ক গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে বৃত্তাকার নৌ ও রেলপথ তৈরির কথা রয়েছে। ঢাকা শহর ঘিরে ৮৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইনার সার্কুলার রুট দুটি ভাগে বাস্তবায়নের কথা। ইনার সার্কুলার রুট ফেজ ১-এর আওতায় আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে তেরমুখ, পূর্বাচল, বেরাইদ, ডেমরা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বছিলা, হাজারীবাগ, সোয়ারীঘাট, কদমতলী, তেঘরিয়া, পোস্তগোলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে ইনার সার্কুলার রুট ফেজ ২-এর আওতায়। এখানে আগে থেকেই সড়ক আছে, যা প্রশস্ত করতে হবে। তবে সড়ক নির্মাণ করতে হবে ৪৭ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। কারণ তেঘরিয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের অংশ। আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পথ সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওতায়। অবশিষ্ট ৪৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা দরকার। ইনার সার্কুলার সড়কের গাবতলী-বাবুবাজার-কদমতলী অংশের ১২ কিলোমিটার নির্মাণ সবচেয়ে জরুরি। সেখানে সিটি করপোরেশন জমি ব্যবহারের অনুমতি না দিয়ে নিজেই রাস্তা নির্মাণে প্রকল্প নিয়েছে। ১৯৮৭ সালে আবদুল্লাহপুর থেকে সোয়ারীঘাট পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়, যা বেড়িবাঁধ নামে পরিচিত। এর ওপরে বর্তমানে দুই লেনের সড়ক রয়েছে। দুই পাশে বাঁধের বিস্তর জমি রয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য সরকারি অর্থায়নে ইতোমধ্যে ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা বলা যায় জলে গেছে। কারণ সেখানে ৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার ইলেকট্রিক রেলপথ নির্মাণের কথা বলা হয়। বৃত্তাকার রেলপথের পুরোটা একবার ঘুরতে ট্রেনের ৬০ দশমিক ৭ মিনিট সময় লাগবে। এজন্য প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। সংস্থান হয়নি এই টাকার এটিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

সার্কুলার ওয়াটার ওয়ের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (২০১০-২০১৫) বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২৯.৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার নৌপথ সচল করা হয়েছিল। এসময়েই ৯টি ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েচিল। উত্তোলন করা হয়েছিল বুড়িগঙ্গার বর্জ্রও। তারপরে অগ্রগতি মন্থর হয়েছে। তবে এই পথটি ঢাকাবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে পণ্য পরিবহন অন্যদিকে বিনোদনের একটি পথ হতে পারে। দুই তীর ধরে আসা-যাওয়া বিবেচনা করলে এই পথের দৈর্ঘ্য হবে ২২০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল করা গেলে নৌযান চলাচল বাড়বে। পণ্যবাহী নৌযানের পাশাপাশি বাড়বে যাত্রীবাহী নৌ চলাচলও। সড়কের ওপর চাপ কমে আসবে। নদীগুলোর দুই তীরও থাকবে দখলমুক্ত।

২০১৫ সালে ‘ঢাকা শহরের চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীর ভূমিতে তীর রক্ষা, হাঁটার পথ তৈরি ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পটিই বৃত্তাকার নৌপথ নামে পরিচিত। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইডাব্লিউটিএ। পাঁচ নদীর মধ্যে আমিনবাজার সেতু থেকে ত্রিমুখ সেতু পর্যন্ত তুরাগ নদের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার, ত্রিমুখ সেতু থেকে সুলতানা কামাল সেতু পর্যন্ত বালু নদের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার, সুলতানা কামাল সেতু থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার, মুক্তারপুর থেকে বক্তাবলি পর্যন্ত ধলেশ্বরীর দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার এবং বক্তাবলি থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। এই পাঁচ নদী একটার সঙ্গে আরেকটা ঢাকাকে ঘিরে রাখায় রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার নদীপথ তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক এই ঐশ্বর্যকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
প্রকল্প পরিচালকের দফতর সূত্র জানায়, পুরো পথটিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে তিন প্রকল্পে কাজ করা হচ্ছে। নদীর এলাকা দখলমুক্ত, হাঁটা পথ তৈরির পাশাপাশি নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজও করা হচ্ছে। এতে করে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের সংখ্যা বাড়বে। যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলকে উৎসাহিত করতে নদীর পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরি। তার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের শুরুতে রাজধানীর বছিলা, টঙ্গী ও শ্যামপুরে ১৫ কিলোমিটার ও নারায়ণগঞ্জ সদর এবং সিদ্ধিরগঞ্জের কাঞ্চনপুর ও টানবাজার এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার হাঁটা পথ তৈরি করা হয়েছে। ওই অংশে যেসব জায়গায় দখল ছিল সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী হাঁটা পথ নির্মাণকাজও শেষ করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রকল্পের অধীনে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমিতে ৫২ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এই ৫২ কিলোমিটারের মধ্যে ঢাকা নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল ২১ কিলোমিটার, টঙ্গী নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল ১৪ কিলোমিটার এবং নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত ১৭ কিলোমিটার। জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যমান তীর রক্ষা এলাকায় কংক্রিটের হাঁটা পথ, নিচু তীরভূমিতে কলামের ওপর হাঁটা পথ, সীমানা প্রাচীর, বসার বেঞ্চ, কংক্রিট ও স্টিলের জেটি, পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, ইকো পার্ক, সবুজ বনায়ন ও জলজ উদ্ভিদ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২০ সালের আগস্টে যাচাই সভা হয়। পরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত কারিগরি কমিটির ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টঙ্গী নদীবন্দরের অন্তর্ভুক্ত ধউর সেতু থেকে ত্রিমুখ সেতু পর্যন্ত মোট ১৩টি নিচু সেতু রয়েছে। ফলে উঁচু নৌযান এই ৩৮ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে পারে না। তাই এই ১৩টি সেতু ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ। এর মধ্যে আশুলিয়া সেতু, ধউর সেতু, টঙ্গী সেতু, ত্রিমুখ সেতু, বালু সেতু, ইছাপুর সেতু ও টঙ্গী রেল সেতু অন্যতম। ‘সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত কিছু সেতু সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। সব সেতু সরানো না হলে এই অংশ সচল হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads